ডা. বুলবুল ইসলাম 'ঈসা

কনসালটেন্ট হোমিওপ্যাথ

ডি.এইচ.এম.এস (বি.এইচ.বি)
ফাউন্ডার ডিরেক্টর- গ্লোবাল হোমিও সেন্টার

পেপটিক আলসার, এর কারণ, লক্ষণ ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা।

যা যা থাকছে-

পেপটিক আলসার কী?

…পেপটিক আলসার হল পাকস্থলী বা ডিওডেনাম এর আস্তরণের ঘা বা ক্ষত।

এটা সাধারণত Helicobacter pylori (H. pylori) নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট প্রদাহের ফলে এবং সেই সাথে পাকস্থলীর অ্যাসিডজনিত ক্ষয় থেকে হয়ে থাকে।

পেপটিক আলসারের কারণ কী?

পেপটিক আলসারের পেছনে বেশ কিছু কারণ দায়ী হয়ে থাকে, যেমন-

১। বংশগতিঃ পেপটিক আলসারে আক্রান্ত রোগীদের প্রায়ই রোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকে, বিশেষ করে ডিওডেনাল আলসারের ক্ষেত্রে।

ক্রণিক আলসার রোগীদের আত্মীয়দের মধ্যে আলসারের সম্ভাবনা প্রায় ৩ গুণ বেশি।

২। Helicobacter pylori: এই অনুজীব পেপটিক আলসার রোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইটিওলজিক্যাল ফ্যাক্টর যা ৯০% ডিওডেনাল আলসার এবং ৭০% গ্যাস্ট্রিক আলসারের জন্য দায়ী। গ্যাস্ট্রাইটিস সৃষ্টি করে এটি গ্যাস্ট্রিক মিউকোসার অ্যাসিড এবং পেপসিন আক্রমণের প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে যার ফলে গ্যাস্ট্রিক আলসার হয়ে থাকে।

৩। Non-Steroidal Anti Inflammatory Drugs (NSAIDS): এগুলি গ্যাস্ট্রিক মিউকোসাল রেসিস্টেন্সকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং এটি ৩০% পর্যন্ত গ্যাস্ট্রিক আলসারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইটিওলজিক্যাল ফ্যাক্টর।

৪। ধূমপানঃ ধুমপান গ্যাস্ট্রিক আলসার এবং অল্প পরিমাণে ডিওডেনাল আলসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

পেপটিক আলসারের লক্ষণ কী?

এর প্রধান লক্ষণ পেটে ব্যথা এবং জ্বালা। পাশাপাশি অজীর্ণ, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব এবং বমি হতে পারে। রোগ আরো খারাপ পর্যায়ে গেলে রক্ত বমি এবং মলের সাথে রক্ত যেতে পারে।

পেপটিক আলসারের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ

হোমিওপ্যাথিতে Argentum Nitricum, Arsenic Album, Nux Vomica, Kali Bichromicum, Lycopodium Clavatum, Carbo Veg, Graphites, Phosphorus প্রভৃতি ঔষধ গুলো পেপটিক আলসারের জন্য অধিক ব্যবহৃত হলেও প্রপার কেইস টেকিং করে সিমটম এভালুয়েশন এর মাধ্যমে হোমিওপ্যাথিক বাক্সের যে কোন ঔষধই পেপটিক আলসারের জন্য নির্বাচিত এবং ফলপ্রসূ হতে পারে।

পেপটিক আলসারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সতর্কতাঃ

আমরা প্রত্যেকেই জানি বা কোন ক্ষতস্থান বা প্রদাহিত স্থান এর চিকিৎসা চলাকালীন সেই স্থানটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখতে হয়। যে কারণে সেখানে ড্রেসিং করা হয়, ব্যান্ডেজ করা হয়, পর্যাপ্ত আলো বাতাস যেন লাগে সে ব্যবস্থা করা হয় এবং জীবাণু সংক্রামক বিরোধী বিভিন্ন মেডিসিন ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি সেখানে আঘাত যেন না লাগে সেজন্য অত্যন্ত সাবধানে থাকা হয়। যে কারণে ক্ষত হয়েছে সে কারণ থেকে দূরে সরে থাকতে হয়।

সে দিক দিয়ে পেপটিক বা গ্যাস্ট্রিক আলসারও তো এক ধরনের ক্ষতই।  কাজেই এর চিকিৎসার সময়ও উচিত কাজ হচ্ছে উপরে লেখা সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। 

কিন্তু সেটা কি আদৌ সম্ভব?  সেসব ক্ষততে কি ড্রেসিং করা সম্ভব? ব্যান্ডেজ বাধা সম্ভব? ওষুধ লাগানো সম্ভব? যে কারণে সেই ক্ষতটা হয়েছে সেখান থেকে সরে থাকা কি সম্ভব?

না। কিন্তু অন্ততপক্ষে একটা কাজ করা সম্ভব, খাদ্য খাবার নিয়ন্ত্রণ করা এবং সু-নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের মাধ্যমে গ্যাস্ট্রিক আলসারকে বাড়িয়ে তোলার মত এসিড-পেপসিন নিয়ন্ত্রণ করে আরোগ্য প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা। অন্যথায় সম্পূর্ণ চিকিৎসাটাই ব্যার্থ হয়ে যেতে পারে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp