ভিটিলিগো (vitiligo) বা শ্বেতি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শারীরিক কষ্ট হয়ত খুব বেশি একটা হয় না কিন্তু এতে তাদের মানসিক রোগের কষ্টের যেন অন্ত নেই। আজ আমরা এই রোগের খুঁটিনাটি বিষয় এবং চিকিৎসা পদ্ধতি সমূহ নিয়ে আলোচনা করব। বলব সব থেকে ভালো চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে। চলুন শুরু করা যাক।
ভিটিলিগো (vitiligo) বা শ্বেতী রোগ কাকে বলে?
শরীরের কোন স্থানে যদি পিগমেন্টের অনুপস্থিতি দেখা দেয় এবং সেই স্থানটা রং শূন্য হয়ে সাদা হয়ে যায় এটাকেই মূলত ভিটিলিগো বা শ্বেতী রোগ বলা হয়।
ভিটিলিগো (vitiligo) বা শ্বেতী রোগের মেইন ফ্যাক্টঃ
আমাদের শরীরের সর্বশেষ স্তর হচ্ছে আমাদের স্কিন বা ত্বক। এই ত্বকের আবার তিনটি লেয়ার বা স্তর রয়েছে,
১। হাইপোডারমিস (hypodermis)
২। ডারমিস (dermis) এবং
৩। ইপিডারমিস (epidermis)
এই ইপিডারমিসের লোয়ার লেয়ারে রয়েছে মেলানোসাইট (melanocyte) নামক এক ধরনের কোষ। এই কোষে তৈরি হয় মেলানিন (melanin) নামক এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ। এই মেলানিনই আমাদের স্কিন বা ত্বকের রংয়ের জন্য দায়ী। এই মেলালিনের পরিমাণ যার যত বেশি তার রং তত বেশি গাঢ় অর্থাৎ কালো, আর যার যত কম তার রং ততো হালকা অর্থাৎ ফর্সা।
এই মেলানোসাইট সেল কেবল আমাদের ত্বকেই রয়েছে তা নয় আমাদের চোখে, আমাদের মস্তিষ্কে সহ শরীরে অন্যান্য আরো অনেক স্থানে রয়েছে।
যাইহোক, কোন কারনে যদি স্কিনের কোন স্থানের এই মেলানোসাইট সেলগুলো ধ্বংস হয়ে যায় বা তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় তাহলে সেই স্থানটি রঞ্জক পদার্থ মেলানিন এর অভাবে সাদা হয়ে যায়। এটাই ভিটিলিগো বা শ্বেতি রোগের মূল ফ্যাক্ট।
ভিটিলিগো (vitiligo) বা শ্বেতী রোগ এর কারণঃ
মেলানোসাইট (melanocyte) সেল ধ্বংস হলেই যেহেতু ভিটিলিগো হয় সেহেতু ভিটিলিগোর কারণ বলতে গেলে আমাদেরকে মূলত বলতে হবে মেলানোসাইট (melanocyte) সেল এর ধ্বংস হওয়ার কারণ।
অনেক কারণেই আমাদের ত্বকের মেলানোসাইট সেল ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, যেমন-
১। অটোইমিউন অবস্থা (autoimmune conditions): আমাদের ইমিউন সিস্টেম সম্পর্কে তো আমরা সকলেই মোটামুটি কম বেশি জানি। শরীরে যদি কোন অবাঞ্ছিত বস্তু বা জীবানু, যেমন ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদির অনুপ্রবেশ ঘটে তখন আমাদের ইমিউন সিস্টেম তাদেরকে আক্রমণ করে এবং ধ্বংস করে। কিন্তু অটোইমিউন অবস্থা হচ্ছে সেই অবস্থা যখন শরীরের ইমিউন সিস্টেম বুঝতে ভুল করে শরীরেরই কোন দরকারী গুরুত্বপূর্ণ সেল বা টিস্যুকে শত্রু মনে করে এবং তাদেরকে ধ্বংস করে। আমরা টাইপ-১ ডায়াবেটিসেও এমনটা দেখতে পাই যেখানে শরীরের ইমিউন সিস্টেম প্যানক্রিয়াসের ইনসুলিন উৎপাদনকারী সেলগুলোকে শত্রু মনে করে ধ্বংস করে ফেলে, ফলে ইন্সুলিনের ঘাটতি দেখা দেয় এবং টাইপ-১ ডায়াবেটিস হয়। একইভাবে অনেক সময় আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম শরীরের রঙ তথা মেলানিন উৎপাদনকারী এই মেলামোসাইট সেলগুলোকে শত্রু ভাবতে শুরু করে এবং আক্রমণ করে ধ্বংস করে ফেলে, ফলে ভিটিলিগো বা শ্বেতী রোগ সৃষ্টি হয়।
২। জেনেটিক মিউটেশান (Genetic mutation): জেনেটিক মিউটেশন বা আপনার শরীরের ডিএনএ-তে পরিবর্তন আপনার মেলানোসাইট কীভাবে কাজ করে তা প্রভাবিত করতে পারে। ৩০ টিরও বেশি জিন রয়েছে যা আপনার ভিটিলিগো হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
৩। স্ট্রেস (stress): আপনার মেলানোসাইট কোষগুলি যে রঙ্গক তৈরি করে তা পরিবর্তিত হতে পারে যদি আপনি আপনি ঘন ঘন মানসিক চাপ বা শারীরিক চাপ অনুভব করেন, বিশেষ করে আঘাতের পরে।
৪। পরিবেশগত সমস্যা (Environmental conditions): অতিবেগুনী রশ্মি এবং কিছু বিষাক্ত রাসায়নিক এর সংস্পর্শে আসার কারণেও শরীরের মেলানোসাইট কোষগুলি প্রভাবিত হতে পারে, এবং তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। এমনকি তারা ধ্বংসপ্রাপ্তও হতে পারে।
৫। বংশগত কারণ (Hereditary factors): ভিটিলিগোর কারণ সম্পর্কে আরও জানার জন্য গবেষণা চলমান থাকলেও, এখনও পর্যন্ত যা জানা গিয়েছে তাতে দেখা যায় যে, ভিটিলিগোর প্রায় ৩০% ঘটনা জেনেটিক। এর মানে হল যে এই অবস্থাটি বংশগত এবং আপনি সম্ভাব্যভাবে আপনার পরিবার বা বংশ থেকে ভিটিলিগো পেতে পারেন।
ভিটিলিগো (vitiligo) বা শ্বেতী রোগ এর লক্ষণ
উপরের আলোচনা থেকেই এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে ভিটিলিগোর প্রধান এবং একমাত্র লক্ষণ হচ্ছে ত্বকের স্বাভাবিক রং না থাকা অর্থাৎ সাদা হয়ে যাওয়া।
এছাড়াও ত্বকের যে স্থানে ভিটিলিগো হয় সেই স্থানের লোম বা চুলগুলোও বিবর্ণ হয়ে যায়।
ভিটিলিগোতে আক্রান্ত ব্যাক্তি কোন ব্যাথা বা জ্বালা অনুভব করেনা, তবে শুরুর দিকে কেউ কেউ ত্বকের সংশ্লিষ্ট স্থানে হালকা চুলকানি বা ইরিটেশান অনুভব করতে পারে।
ভিটিলিগো (vitiligo) বা শ্বেতী রোগ কাদের হয়?
ভিটিলিগো নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকলেরই হতে পারে। পৃথিবী ব্যাপি প্রতি ১০০ জন মানুষের মধ্যে ১ জন এই রোগে আক্রান্ত।
কীভাবে ভিটিলিগো (vitiligo) বা শ্বেতী রোগ নির্ণয় করা হয়?
একজন চিকিৎসক চাক্ষুষ পরীক্ষায়ই সাধারণত ভিটিলিগোর সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারেন। তবে এটা যদি শুরুর দিকে হয়, অথবা কোন ফর্সা মানুষের ক্ষেত্রে হয় যেখানে স্বাভাবিক ত্বকের সাথে আক্রান্ত স্থানটি আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়ে, সেখানে তিনি আল্ট্রা ভায়োলেট (UV) রে ব্যাবহার করে নিশ্চিত হতে পারেন।
ভিটিলিগো (vitiligo) বা শ্বেতী রোগ এর জটিলতাঃ
যদিও ভিটিলিগো প্রধানত একটি কসমেটিক অবস্থা, যা সাধারণত শারীরিক সৌন্দর্যকে প্রভাবিত করে, তবুও ভিটিলিগোর রোগীরা আরো কিছু জটিলতায় পড়তে পারে। যেমন-
১। ত্বকের সংবেদনশীলতাঃ আক্রান্ত স্থানে মেলানোসাইটের অভাব রয়েছে, তাই সেই স্থানের ত্বক বাকি ত্বকের তুলনায় সূর্যালোকের প্রতি বেশি সংবেদনশীল হতে পারে। এটি ট্যানিংয়ের পরিবর্তে আপনার ত্বক দ্রুত পুড়ে যেতে পারে।
২। চোখের অস্বাভাবিকতাঃ রেটিনা হচ্ছে চোখের ভিতরের স্তর যাতে আলো-সংবেদনশীল কোষ থাকে। ভিটিলিগোতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রেটিনাতে কিছুটা অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে। তাদের আইরিসে (চোখের রঙিন অংশ) রঙের কিছু ভিন্নতা ঘটতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, রেটিনা বা আইরিসের প্রদাহও হতে পারে, তবে দৃষ্টি সাধারণত প্রভাবিত হয় না।
৩। অটোইমিউন ডিজিজের প্রবণতাঃ ভিটিলিগো নিজেই যেহেতু এক ধরনের অটোইমিউন ডিজিজ সেহেতু ভিটিলিগোতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অন্যান্য অটোইমিউন ডিজিজের সম্ভাবনা বেশি থাকে। সাধারণ অটোইমিউন ডিজিজের মধ্যে রয়েছে হাইপোথাইরয়েডিজম, ডায়াবেটিস এবং অ্যানিমিয়া।
৪। মানসিক চ্যালেঞ্জঃ ভিটিলিগোতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা তাদের চেহারা দেখে বিব্রত বোধ করতে পারে। ভিটিলিগোতে আক্রান্ত কিছু লোকের আত্ম মর্যাদাবোধ কম থাকে। এটি উদ্বেগ বা হতাশার কারণ হতে পারে। কেউ কেউ জন সমাগম থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে বা সামাজিক পরিস্থিতি এড়াতে চায়।
ভিটিলিগো (vitiligo) বা শ্বেতী রোগ কি ভাল হয়?
ভিটিলিগোতে আক্রান্ত প্রায় সকল রোগী এই একটা প্রশ্ন করে থাকেন ভিটিলিগো কি ভাল হয় এখনো পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিটি লোগোতে আক্রান্ত প্রায় ১০ থেকে ২০% রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়।
কাদের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে?
ভিটিলিগো (vitiligo) বা শ্বেতী রোগে আক্রান্ত সেই সমস্ত রোগীদের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে যারা
১। ২০ বছর বয়সের আগে ভিটিলিগো তে আক্রান্ত হয়।
২। যাদের শুধুমাত্র ফেস বা মুখমন্ডলে এই রোগ দেখা দেয়।
৩। যাদের ছয় মাসের মধ্যে রোগের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়
কাদের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে?
ভিটিলিগো (vitiligo) বা শ্বেতী রোগে আক্রান্ত সেই সমস্ত রোগীদের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে যারা-
১। ২০ বছর বয়সের পরে গিয়ে ভিটিলিগোতে আক্রান্ত হয়।
২। যাদের ঠোট এবং হাতপা সহ অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হয়।
৩। যাদের রোগ ছয় মাস পার হওয়ার পরও ক্রমবর্ধমান থাকে।
ভিটিলিগো (vitiligo) বা শ্বেতী রোগ কি ছোঁয়াছে বা সংক্রামক?
না। ভিটিলিগো (vitiligo) বা শ্বেতী রোগ সংক্রামক, এমন কোন তথ্য এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
ভিটিলিগো (vitiligo) বা শ্বেতী রোগ এর প্রতিরোধঃ
অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন আমরা কিভাবে ভিটিলিগো (vitiligo) বা শ্বেতী রোগ প্রতিরোধ করতে পারি?
যেহেতু ভিটিলিগোর বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, এটি প্রতিরোধ করার কোন উপায় নেই। তবে আপনি কিছু কাজের মাধ্যমে ভিটিলিগো হওয়ার ঝুঁকি কমাতে পারেন। যেমন-
১। শরীরকে আঘাত হতে দূরে রাখা।
২। ক্ষতিকর কেমিক্যাল থেকে দূরে থাকা।
৩। মানসিক চাপ বা স্ট্রেস কমানো।
৪। শরীরের কোন অটোইমিউন কন্ডিশন থাকলে তার প্রতিকারের চেষ্টা করা।
৫। ত্বক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
৬। ত্বকে নিয়মিত খাঁটি নারকেল তেল ব্যাবহার করা।
৭। নিয়মিত শরীরে সূর্যের আলো লাগানোর অভ্যাস করা।
ভিটিলিগো (vitiligo) বা শ্বেতী রোগের চিকিৎসাঃ
ভিটিলিগো (vitiligo) বা শ্বেতী রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এলোপ্যাথি এবং হোমিওপ্যাথি ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে ব্যবস্থাপনা দিয়ে থাকে। আজ আমরা দুটো বিষয়েই আলোচনা করব।
ভিটিলিগো (vitiligo) বা শ্বেতী রোগের এলোপ্যাথিক চিকিৎসাঃ
প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি বা অ্যালোপ্যাথিক সিস্টেম অনুযায়ী ভিটিলিগোর কোনো প্রতিকার অর্থাৎ নিরাময়দায়ী চিকিৎসা নেই। কিন্তু আপনি যদি চিকিৎসা নিতে চান, তাহলে আপনার চিকিৎসক আপনাকে আপনার এবং আপনার ত্বকের জন্য একটি সঠিক চিকিৎসা বেছে নিতে সাহায্য করবে।
তারা আপনাকে প্রচলিত কিছু ব্যবস্থার মধ্য হতে এক বা একাধিক ব্যবস্থার পরামর্শ দিতে পারেন। যেমন-
১। ওষুধ (Medications): এলোপ্যাথিতে এমন কোন স্পেশাল মেডিসিন নেই যা ভিটিলিগো (vitiligo) বা শ্বেতি রোগকে সম্পূর্ণভাবে সারাতে পারে। তবে কিছু ওষুধ তারা ব্যবহার করে যা ভিটিলিগো (vitiligo) বা শ্বেতি রোগ ছড়িয়ে পড়ার গতিকে কমিয়ে আনতে, মেলানোসাইট সেলগুলোকে রি-গ্রো করতে এবং আক্রান্ত ত্বককে কালো করতে সাহায্য করে। ওষুধ গুলোর মধ্যে রয়েছে-
- Corticosteroids.
- Topical Janus kinase inhibitors (ruxolitinib)
- Calcineurin inhibitors.
২। ফটো থেরাপি (phototherapy): লাইট থেরাপি বা ফটো থেরাপিতে সাধারণত আলট্রাভায়োলেট এ (UVA), আল্ট্রাভায়োলেট বি (UVB) এবং কিছু মেডিকেল গ্রেড এর লেজার (lasers) লাইট ব্যবহার করা হয় যা ত্বকের রংকে পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
৩। ডিপিগমেন্টেশন থেরাপি(Depigmentation therapy): ডিপিগমেন্টেশন থেরাপি হচ্ছে সেই থেরাপি যেখানে আপনার ত্বকের অসুস্থ অংশকে ঠিক করার বদলে আপনার সুস্থ ত্বকের রং কে পরিবর্তন করে বা সরিয়ে দিয়ে সেটাকে অসুস্থত ত্বকের রঙের সাথে মেলানোর চেষ্টা করা হয়। এতে সাধারণত মনোবেনজোন (monobenzone) ব্যবহার করা হয়।
৪। কসমেটিক সার্জারি (Cosmetic surgery): ভিটিলিগো (vitiligo) বা শ্বেতী রোগে আক্রান্ত স্থান যদি ছোট থাকে এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা না থাকে তাহলে অনেক সময় সার্জারির মাধ্যমে আক্রান্ত অংশ ফেলে দিয়ে সেখানে শরীরের সুস্থ স্থানের ত্বক এনে রিপ্লেস করা হয়।
৫। কাউন্সেলিং(Counseling): আমরা জানি ব্যক্তি জীবনে এবং সামাজিক জীবনে স্বাভাবিকভাবে চলার জন্য, উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে কাজ করার জন্য আত্মবিশ্বাস একটা বড় জিনিস। ভিটীলীগোতে আক্রান্ত অনেক ব্যক্তির মধ্যে সেই আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলার প্রবণতা দেখা যায়। যার ফলে তাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম এবং জীবন-যাপন ব্যবস্থা ব্যাহত হয়। এ কারণে অনেক সময় কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে রোগীর আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়।
ভিটিলিগো (vitiligo) বা শ্বেতী রোগের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা জগতের সবচেয়ে আধুনিক এবং ব্যাতিক্রমী পদ্ধতি। এটা কোন রোগ ভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি নয়। এটা একটা লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি। অর্থাৎ এখানে রোগের নাম কী সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং রোগ যাই হোক সেই রোগে রোগীর মধ্যে কী কী লক্ষণ দেখা দিয়েছে, তাতে তার শারীরিক এবং মানসিকভাবে কী কী পরিবর্তন দেখা গিয়েছে সেটাকেই এখানে গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং কেইস টেকিং নামক একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় সেই সমস্ত লক্ষণগুলো সংগ্রহ করে সেগুলোকে যাচাই বাছাই তথা এনালাইসিস করে একটা মাত্র সদৃশ্য মেডিসিন নির্বাচন করা হয়। তারপর রোগীর বয়স এবং শারীরিক ও মানসিক অবস্থা অনুযায়ী সেই ওষুধটি সঠিক শক্তিতে খুবই সূক্ষ্ম মাত্রায় প্রয়োগ করা হয়।
অর্থাৎ সোজা বাংলায় বলতে গেলে রোগের নাম আমরা যাই দিইনা কেন, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার রুল একটাই-
প্রপার কেইস টেকিং> এভালুয়েশান অব সিম্পটম> ফাইন্ড আউট দ্যা সিমিলিমাম
রেমিডি> এপলাই উইথ দ্যা মিনিমাম ডোজ এন্ড রাইট পটেন্সি!
আর তাতেই রোগী সুস্থ্য হয়।
কাজেই ভিটিলিগো (vitiligo) বা শ্বেতী রোগের রোগীর ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। আর এই নিয়মে চিকিৎসা করে সুন্দর ফলাফলও পাওয়া যায়।
চলুন আমার চিকিৎসিত একটা রোগির কেইস শেয়ার করি।
এখানে উল্ল্যেখ্য যে, রোগীর অনুমতি নেওয়া হয়েছে এবং তার চাওয়া অনুযায়ী তার পরিচয় গোপন রাখতে ছবিতে মুখ ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
চিকিৎসার আগে
চিকিৎসার পরে
২০২০-২১ সাল হবে। সে আমার কাছ থেকে একবার বা বড়জোর দুইবার ওষুধ নিয়েছিল। যতটা মনে আছে আমি রোগীটাকে তার মেন্টাল স্টেইটের ওপর ভিত্তি করে ইগনেশিয়া ২/০ এবং ৩/০ প্রেসক্রিপশন করেছিলাম।
এখনও পর্যন্ত (২১/৮/২০২৪) তার কপালের এই সমস্যাটা ঠিক আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় তার হাতের আঙ্গুল বা শরীরের অন্যান্য স্থানের সমস্যা ঠিক হয়নি। কারণ হিসেবে যদি বলি তো সেটা হবে তার ধারাবাহিক চিকিৎসা নেওয়ার মানসিকতা না থাকা। কারণ এই ধরনের ডিজেনারেটিভ কেইস ঠিক হওয়া বেশ সময় এবং ধৈর্য্য সাপেক্ষ।
বিঃদ্রঃ কেউ আবার পোস্টে লেখা ঔষধের নাম দেখেই ওই ঔষধ কিনে খাওয়া শুরু করবেন না দয়াকরে! শারীরিক এবং মানসিক লক্ষণ স্বদৃশ্য হলে কেবল ইগ্নেশিয়া নয়, শ্বেতী রোগীদের জন্য হোমিওপ্যাথিক বাক্সের যে কোন ঔষধই প্রযোজ্য হতে পারে।
আর সেটা যে কেন পারে ঠিক এ বিষয়েই আমি উপরে কিছুটা আলোকপাত করেছি। হোমিওপ্যাথি রোগ ভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি নয়। অর্থাৎ এখানে শ্বেতী রোগের ওষুধ এইটা, জ্বরের ওষুধ এইটা, ডায়রিয়ার ওষুধ এইটা এমন কোন কথা নেই। রোগীর শারীরিক এবং মানসিক লক্ষণের সাথে মিললে একই ওষুধে ১০ রকমের রোগ সারতে পারে। আবার শারীরিক এবং মানসিক লক্ষণ আলাদা হলে একই রোগের ১০ জন রোগীকে দশটা আলাদা আলাদা মেডিসিনও দিতে হতে পারে।
আশা করি সকলে বিষয়টার উপর গুরুত্ব দিবেন।