ডা. বুলবুল ইসলাম 'ঈসা

কনসালটেন্ট হোমিওপ্যাথ

ডি.এইচ.এম.এস (বি.এইচ.বি)
ফাউন্ডার ডিরেক্টর- গ্লোবাল হোমিও সেন্টার

Homoeopathic medicine

হোমিওপ্যাথিক ঔষধ কি সত্যিই ধীরে কাজ করে?

যা যা থাকছে-

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রশ্ন করেছেন, “হোমিওপ্যাথি ধীরে কাজ করে কেন? এটার কারণ কি ??”

একটা নতুন পোস্ট বা কেইস শেয়ার করার জন্য লেখা অনেক ঝামেলা। তাই আমার ফেইসবুক পেইজ ঘেটে দুইটা পোস্ট বের করালাম যা আমি কয়েকমাস আগে পোস্ট করেছিলাম। সেই ২টা পোস্ট যদি সরাসরি তুলে ধরি তাহলে আমার মনে হয় আজকের এই প্রশ্নের উত্তর অনেকাংশেই দেয়া হয়ে যাবে।

প্রথম পোস্টঃ (২৮/১২/২০২৩)

আমি গতকাল (২৭/১২/২০২৩) রাতেই কইসটি রেকর্ড করি।

নামঃ Mrs X,
বয়সঃ ৩১ বছর।
বিবাহিতা।
বাসস্থান- ঢাকা।

কেইস স্টাডি করে যা পেলাম-

১। ২০০৯ সাল থেকে তার মাথাব্যথা।

২। প্রতি শীতেই তার এই মাথাব্যাথা হয়।

৩। ২০০৯ সালে ইফতারিতে বরফ শীতল পানি খাওয়ার পর থেকেই তার এই সমস্যাটা শুরু।

৪। ঠান্ডায়, ঠান্ডা বাতাসে এবং শুয়ে পড়লে মাথা ব্যথা বেশি হয়,

৫। প্রতি সন্ধ্যায় বৃদ্ধি ।.

৬। মাথা ব্যাথার তীব্রতা প্রচন্ড যা গত দুদিন হল বেড়ে গিয়েছে।

৭। ব্যাথা ধীরে ধীরে বাড়ে ধীরে ধীরে কমে।

৮। ব্যথার সময় খুব বিরক্তি অনুভব করে।

৯। আলো সহ্য করতে পারেনা।

১০। শব্দ সহ্য করতে পারেনা।

১১। একা থাকতে চায়।

১২। আগে এলোপ্যাথিক ওষুধ খেত কিন্তু এলোপ্যাথিক ওষুধের রোগ নির্মূল না হয়ে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয় বলে সে এলোপ্যাথিক ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে।

১৩।এই রোগটা যদি তার থেকে একেবারে চলে যায় তাহলে সে খুব খুশি হবে।

আমি মানসিক লক্ষণ গুলোর উপরেই অধিক গুরুত্ব দিয়ে মেডিসিন সিলেক্ট করলাম Belladonna.

কুরিয়ার সার্ভিসে ওষুধও পাঠালাম আজ। তবে ঔষধটা পৌঁছাতে দু-একদিন সময় লাগবে বলে আমি ওখানের কোন ফার্মেসি থেকে Belladonna 30 কিনে নিতে বললাম।

মাত্র ১ ফোঁটা ঔষধ ২ ড্রাম ডিস্টিল্ড ওয়াটারে মিশিয়ে ৩ এর ১ অংশ করে ১০ মিনিট পরপর তাকে ৩ বার খেতে বললাম।

সে ঔষধটা আজ (২৮/১২/২০২৩) ৫ টা বেজে ১০ মিনিটে এক ভাগ, ৫ টা বেজে ২০ মিনিটে এক ভাগ এবং ৫ টা বেজে ৩০ মিনিটে এক ভাগ খেয়ে শেষ করে।

৬ টা বেজে ৫১ মিনিটে তার সাথে আমার ফোনে কথা হল- সে বলল আজ সে ৮০% সুস্থ বোধ করছে। মাথাব্যাথা তেমন নেই। তবে সেস্থলে তার পা ব্যাথা করছে।

…আমি বুঝালাম, জীবনীশক্তি রোগকে শরীরের অধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ থেকে প্রথমে কম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে তাড়িত করে, তারপর সেখান থেকে আরো কম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে, তারপর আরো কম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে, এভাবেই আস্তে আস্তে রোগ পুরোপুরি দূর হয়।(হেরিং’স-ল)

দ্বিতীয় পোস্টঃ ১৮/০১/২০২৪

আমার পেইজটা খুব ছোট। খুব বেশি ফলোয়ার নেই। তারপরও এটা খুবই আশার কথা যে, আমি পোস্ট করা কয়েকদিন বন্ধ রাখলে সেই মুষ্টিমেয় কিছু ফলোয়ারদের মধ্য থেকেও কল আসে কেন পোস্ট করছি না তা জানতে চেয়ে!

এদিকে বেশ কিছুদিন পোস্ট না করার কারণে এখন ব্রেক অফ স্টাডির মত একটা অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে! কোনটা দিয়ে যে শুরু করব ভেবে পাওয়া মুশকিল!

যাইহোক, একটা বাচ্চা রোগীর কেস দিয়ে শুরু করি।

১৫/০১/২০২৪ তারিখে সন্ধ্যার পর বাচ্চাটির কেস রেকর্ড করি।

১১ বছরের ছেলে বাচ্চা।

৩-৪ বছর বয়স থেকেই তার কোল্ড এলার্জি। সর্দি-কাশি লেগেই আছে। সর্বশেষ তিন বছর ধরে সমস্যাটা অত্যন্ত প্রবল। কাশি শুরু হলে কাশতে কাশতে দম নেওয়া কষ্টকর হয়ে যায়। হাঁপানির মত অবস্থা তৈরি হয়।
এপর্যন্ত অনেক চিকিৎসা করা হয়েছে। ফলাফল শুণ্য।

অন্যান্য সমস্যার মধ্যে রয়েছে মাথাব্যথা এবং হাতপায়ে ব্যথা।
আর কিছুদিন আগে যে করোনার ভ্যাকসিন নিয়েছে জ্বর কাশি বেশি হলে সেখানেও ব্যথা করে।

কেইস স্টাডি করে যা যা পেলামঃ

কাশি সারাক্ষণই থাকে তবে রাত ভোর হওয়ার কাছাকাছি ফজরের আযানের আগে বৃদ্ধি পায়।

কাশি শুয়ে থাকলে বৃদ্ধি পায়, হেলান দিয়ে বসলে কমে।

ঘন ঘন সর্দি কাশি লেগেই থাকে। এই সর্দি কাশির সাথে নরম মল এবং মলের সাথে মিউকাস যায়।

গোসল করতে পছন্দ করে।

গরম বেশি।

হাত এবং পায়ের তালু জ্বালা করে।


মরিচ খেতে খুবই পছন্দ করে। এছাড়াও ভাজাপোড়া, বিরানি এবং মাংস পছন্দ করে।

অপছন্দের তালিকায় রয়েছে শাকসবজি, মিষ্টি এবং তেতো জাতীয় খাবার।

পায়খানা ইরেগুলার।

মেজাজ কড়া।
সান্ত্বনার রাগ বাড়ে।
প্রচন্ড জেদি।
প্রচন্ড ভূতের ভয় পায়।

অতীত রোগের ইতিহাসে রয়েছে নিউমোনিয়া এবং কুকুরের কামড়, যার কারণে ভ্যাকসিন নেওয়া হয়েছে।

ফ্যামিলি হিস্ট্রিতে পেলাম একাধিক ব্যক্তির অ্যাজমা এবং মানসিক সমস্যা ।

মাথার মধ্যে Kali Carb ঘোরাফেরা করছিল কিন্তু কনস্টিটিউশনাল মেডিসিন হিসেবে Natrum Mur কে প্রিওরিটি দিলাম। মেডিসিন তৈরি করে পেশেন্টের সামনেও রাখলাম। কিন্তু সর্বশেষ পেশেন্টের মা’র কাছ থেকে জানতে পারলাম কাশির সময় রোগীর চোখে প্রচন্ড রকমের ঘুম ঘুম ভাব থাকে যদিও সে ঘুমাতে পারেন। তখনই প্রেসক্রিপশন বদলে তাকে আমি Antim-tart 2/0 দিয়ে দিলাম।

রাত আটটা নয়টার দিকে ওষুধ টার প্রথম ডোজ খেয়ে পরদিন সকালে ১০ টার দিকে তার মা জানালো যে, রাতের তেমন একটা কাশি হয়নি বাচ্চা এখনো ঘুমাচ্ছে।

আমি ঘুম থেকে ওঠার পর ওষুধ টা আরেক ডোজ দিতে বললাম।

পরদিন সকালে (১৭/০১/২০২৪) সে আমাকে রিপোর্ট দিল- টোটালি কোন কাশি নেই!

খুবই সূক্ষ্ম মাত্রায় (দ্বিতীয় গ্লাস থেকে) ঔষধ চলছে।

আজ ১৮ অক্টোবর। ২/৩ মাস চিকিতসার পর চিকিৎসা বন্ধ করা হয়।  শেষবার যখন তাদের সাথে কথা হয়েছিল, বাচ্চাটা সম্পূর্ণ সুস্থ আছে। 

…এখন প্রশ্ন হচ্ছে হোমিওপ্যাথি ধীরে কাজ করল কোথায়?

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp