…এক ভাই প্রশ্ন করেছেন, “কী করে বুঝব যে, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক আমাকে সঠিক চিকিৎসা দিচ্ছেন কিনা?”।
আসলে এটা একটা যুগান্তকারী প্রশ্ন। এই প্রশ্নটা আমি মনে করি কেবল তার নয় বরং সমস্ত বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা সমস্ত রুগ্ন মানবতার। কারণ, বর্তমান সময়ে দেখা যায় যে বেশিরভাগ মানুষই চিকিৎসার নামে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকদের নিকটে গিয়ে প্রতারণার স্বীকার হচ্ছে।
আমাদের বিবেক-বুদ্ধি রয়েছে যাতে কোনো কিছু যাচাই বাছাই করে ভালটা গ্রহণ ও মন্দটা পরিত্যাগ করতে পারি। কিন্তু দুঃখের বিষয়- আমরা অধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতেই অতটা আর যাচাই বাছাই করি না!
যাইহোক, একজন ভালো হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক চেনার ক্ষেত্রে নিচের পয়েন্টগুলো মাথায় রাখুনঃ
১। প্রথমেই হোমিও চিকিৎসকের চেম্বারে গিয়ে দেখবেন যে উনার চেম্বারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ব্যতীত আয়ূর্বেদিক, হারবাল বা নামধারী কিছু হোমিওপ্যাথিক কোম্পানীর বড়বড় সিরাপের বোতল, ট্যাবলেট, মালিশ, মলম, পেটেন্ট, টনিক প্রভৃতি ঔষধ রয়েছে কিনা। যদি থাকে তাহলে প্রথম দর্শনেই বুঝে যাবেন লোকটি ভালো হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক নয়।
কারণ, এইসমস্ত ঔষধের সাথে প্রকৃত হোমিওপ্যাথির কোন সম্পর্কই নেই।
২। কোন চিকিৎসককে যদি দেখেন যেকোনো রোগীকে কেবলমাত্র রোগের নাম শুনেই চটপট ওষুধ দিয়ে দিচ্ছে, বিস্তারিত লক্ষণ সংগ্রহের জন্য চেষ্টা করছে না, সেক্ষেত্রেও মনে করবেন এই লোক ভালো হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক নয়। কারণ, হোমিওপ্যাথি রোগের নাম ভিত্তিক নয়, লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি।
৩। কোন চিকিৎসককে যদি দেখেন একসাথে একের অধিক ঔষধ খেতে দিচ্ছে তাহলেও বুঝবেন সে কোনভাবেই ভালো হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক নয়। কারণ, এক রোগীতে একসাথে একাধিক ঔষধ প্রয়োগ হোমিওপ্যাথির সম্পূর্ণ পরিপন্থী!
৪। কোন চিকিৎসককে যদি দেখেন শক্তিকৃত হোমিওপ্যাথিক ওষুধের পাশাপাশি মাদার টিংচার এবং বায়োকেমিক ওষুধও একসাথে খেতে দিচ্ছে তাহলেও বুঝবেন তিনি কোনোভাবেই ভালো হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক নয়।
এখানে অনেকেই হয়তো আমাকে বলবেন যে, কেন মাদার টিংচার তো হোমিওপ্যাথি ঔষধ, আর বায়োকেমিক ওষুধগুলো তো হোমিওপ্যাথিক কলেজেই পড়ানো হয়!
কিন্তু সেক্ষেত্রে আমার বক্তব্য হল, একান্ত অত্যাবশ্যকীয় ক্ষেত্র ছাড়া কোন ভালো হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকই মাদার টিংচার ব্যবহার করেন না, যদিও আমি আমার প্র্যাকটিস লাইফে তেমন অত্যাবশ্যকীয় ক্ষেত্র এখনো পর্যবেক্ষণ করিনি যা শক্তিকৃত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দ্বারা মোকাবেলা করা সম্ভব নয়!
আর বায়োকেমিক ওষুধ অবশ্য শক্তিকৃতই বটে তবে সেটা হোমিওপ্যাথিক লক্ষনসদৃশ্যে এককভাবে যদি প্রয়োগ করা হয় তবেই কেবল হোমিওপ্যাথিক ঔষধ হিসেবে পরিগণিত হবে, অন্যথায় নয়!
কাজেই আমার পরামর্শ হচ্ছে, কোন চিকিৎসকের চেম্বারে যদি রাশি রাশি মাদার টিংচারের বোতল এবং গন্ডায় গন্ডায় বায়োকেমিকের কৌটো সাজানো দেখতে পান তাহলে সে স্থান ত্যাগ করে অপেক্ষাকৃত ভাল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের অনুসন্ধান করুন।
৫। যদি কোন চিকিৎসককে দেখেন যে তিনি এক সময়ে একটি মাত্র ওষুধ আপনাকে দিলেও একেবারে কোম্পানির সিল্ড ফাইলই আপনার হাতে তুলে দিচ্ছে এবং সেখান থেকে সকাল বিকাল ৫ ফোঁটা বা ১০ ফোটা করে বা প্রতিদিন ৫-১০ ফোটা করে অর্থাৎ স্থুল মাত্রায় খেতে বলছে, তাহলেও বুঝবেন সেই চিকিৎসক কোনভাবেই নির্ভরযোগ্য নয় অর্থাৎ ভালো হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক নয়।
কারণ, হোমিওপ্যাথির মূল মন্ত্র হচ্ছে “Simi-Mono-Mini”, অর্থাৎ ঔষধ হতে হবে Simi অর্থাৎ রোগলক্ষণের সিমিলার (সিমিলিমাম), Mono অর্থাৎ একক বা একটিমাত্র আর Mini অর্থাৎ মিনিমাম ডোজ বা সুক্ষ মাত্রার।
৬। একজন ভালো হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক কখনোই আপনাকে নিয়ে তাড়াহুড়ো করবেন না। তিনি মনোযোগ দিয়ে আপনার কথা শুনবেন। যথেষ্ট সময় নিয়ে আপনার রোগীলিপি করবেন। প্রয়োজনে তিনি তার বইপত্র বা কম্পিউটার (বই-পত্রের আধুনিক ভার্সান) ঘাটাঘাটি করে সব শেষে আপনার হাতে একটি সঠিক হোমিওপ্যাথিক ঔষধ তুলে দিবেন।
এখানে একটা কথা মনে রাখবেন ওষুধের শিশি একাধিক হতে পারে (PL) তবে তা একসাথে খাওয়ার জন্য নয় একটা পরবর্তীতে অন্য একটা।
শেষ কথাঃ কখনোই চেম্বারে রোগীর আধিক্য দেখে একজন চিকিৎসকের ভালো মন্দ বিচার করবেন না। কোনভাবেই ভালো হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক নয় এমন অনেক চিকিৎসকের চেম্বারেও প্রচার প্রসার এবং আশু উপশমদায়ী বিভিন্ন ক্ষতিকর পেটেন্ট, সিরাপ ও টনিকের কল্যাণে আজকাল রোগীর বাড়াবাড়ি রকমের ভীড় পরিলক্ষিত হয়।