সোরিয়াসিস কী? (What is Psoriasis)
সোরিয়াসিস একটি দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক), প্রদাহজনিত চর্মরোগ যা ত্বকের কোষগুলোর দ্রুত বৃদ্ধি ও জমে যাওয়ার কারণে সৃষ্টি হয়। এতে ত্বকে পুরু, লালচে এবং সাদা খোসাযুক্ত প্যাচ বা দাগ দেখা যায়। সাধারণত মাথার তালু, কনুই, হাঁটু ও পিঠে বেশি দেখা যায়। এটি সংক্রামক নয়, তবে মানসিক কষ্ট ও সামাজিক অস্বস্তির কারণ হতে পারে।
সোরিয়াসিস এর প্রকারভেদ (Types of Psoriasis)
সোরিয়াসিস বিভিন্ন ধরণের হতে পারে, যেমন:
প্লাক সোরিয়াসিস (Plaque Psoriasis): সবচেয়ে সাধারণ; ত্বকে লাল ও খোসাযুক্ত প্যাচ দেখা যায়।
গাটেট সোরিয়াসিস (Guttate Psoriasis): ছোট ছোট ফোঁটার মত দাগ দেখা যায়; সাধারণত শিশু ও কিশোরদের মধ্যে হয়।
ইরিথ্রোডার্মিক সোরিয়াসিস (Erythrodermic Psoriasis): সম্পূর্ণ শরীরে লালভাব ও চুলকানি হয়; খুব গুরুতর রূপ।
পাসটুলার সোরিয়াসিস (Pustular Psoriasis): ত্বকে ছোট ফুসকুড়ি বা পুঁজযুক্ত দাগ দেখা যায়।
ইনভার্স সোরিয়াসিস (Inverse Psoriasis): ত্বকের ভাঁজে লাল ও মসৃণ দাগ দেখা যায়।
সোরিয়াসিস কেন হয় (Causes of Psoriasis)
সোরিয়াসিস মূলত একটি অটোইমিউন ডিজঅর্ডার। নিচে উল্লেখযোগ্য কারণগুলো তুলে ধরা হলো:
জেনেটিক ফ্যাক্টর: পরিবারে কারও সোরিয়াসিস থাকলে ঝুঁকি বেশি।
ইমিউন সিস্টেমের গোলযোগ: শরীরের T-সেলগুলো ত্বককে আক্রমণ করে।
স্ট্রেস: অতিরিক্ত মানসিক চাপ সোরিয়াসিসের একটি ট্রিগার।
আঘাত: ত্বকে কাটা বা পোড়া ক্ষত থেকেও হতে পারে।
ওষুধ: লিথিয়াম, বিটা-ব্লকার জাতীয় কিছু ওষুধ এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
সংক্রমণ: গলা ব্যথা বা টনসিলাইটিস থেকেও ট্রিগার হতে পারে।
হোমিওপ্যাথিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সোরিয়াসিসের কারণ
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাশাস্ত্রে সোরিয়াসিসকে শুধুমাত্র একটি চর্মরোগ হিসেবে দেখা হয় না; বরং এটি দেহের গভীরে বিদ্যমান একটি দীর্ঘস্থায়ী মায়াজম্যাটিক ডিসঅর্ডারের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বিবেচিত হয়। হ্যানেমানের মায়াজম থিওরি অনুসারে, সোরিয়াসিস মূলত “সোরা মায়াজম”-এর ফলাফল।
সোরা মায়াজম হলো এমন এক প্রাচীন, সুপ্ত এবং দীর্ঘস্থায়ী অসামঞ্জস্য, যা দেহের অভ্যন্তরীণ জীবনীশক্তিকে ব্যাহত করে ধীরে ধীরে চর্মে, সন্ধিতে বা অনান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে উপসর্গ তৈরি করে। হোমিওপ্যাথির ভাষায়, সোরা মায়াজম থেকেই জন্ম নিতে পারে—
দীর্ঘমেয়াদি চর্মরোগ যেমন সোরিয়াসিস
খুশকি, চুল পড়া বা একজিমার মতো সমস্যা
চুলকানি, শুষ্কতা ও ত্বকের পাপড়ি পড়া
মানসিক দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগজনিত অসুস্থতা
এই দৃষ্টিভঙ্গিতে, শুধুমাত্র ত্বকের উপরে যে উপসর্গ দেখা যায় তা উপশম করলেই সোরিয়াসিস সারবে না। বরং গভীরে লুকিয়ে থাকা সোরা মায়াজমকে নিরসন করতে হবে উপযুক্ত হোমিওপ্যাথিক ওষুধ এবং সুস্থতামূলক জীবনচর্চার মাধ্যমে।
সোরিয়াসিসের লক্ষণ (Symptoms of Psoriasis)
সোরিয়াসিসের লক্ষণ বিভিন্ন রকম হতে পারে রোগীর অবস্থা, বয়স ও শরীরের অংশ অনুযায়ী। সাধারণ লক্ষণগুলো:
লালচে উঁচু ত্বকের দাগ
খোসা পড়া বা সাদা স্কেলি ভাব
ত্বকে চুলকানি ও জ্বালা
ত্বকে ফাটল, রক্ত পড়া
নখে পরিবর্তন (দাগ, ভঙ্গুরতা)
জয়েন্টে ব্যথা ও ফোলাভাব (পসোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস)
সোরিয়াসিস রোগীর ছবি (Psoriasis Images)






সোরিয়াসিস রোগীর খাবার তালিকা (Diet for Psoriasis Patients)
সঠিক খাদ্যাভ্যাস সোরিয়াসিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক। পরামর্শ:
খেতে পারেন:
ওমেগা-৩ যুক্ত মাছ (সালমন, সারডিন)
শাকসবজি ও ফল
জলপাই তেল
বাদাম
এড়িয়ে চলবেন:
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
লাল মাংস
অতিরিক্ত চিনি
অ্যালকোহল
ফাস্ট ফুড
সোরিয়াসিস থেকে মুক্তির উপায় (Ways to Prevent or Manage Psoriasis)
নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার ও ময়েশ্চারাইজিং করা
স্ট্রেস কমানো
পর্যাপ্ত ঘুম
ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন
ট্রিগার এড়ানো (যেমন ওষুধ বা ইনফেকশন)
সোরিয়াসিস এর আধুনিক চিকিৎসা (Modern Treatments for Psoriasis)
টপিকাল থেরাপি: স্টেরয়েড, ভিটামিন D ক্রীম
ফোটোথেরাপি: UV-B আলো ব্যবহার
সিস্টেমিক থেরাপি: মেথোট্রেক্সেট, সাইক্লোসপোরিন
বায়োলজিকস: ইমিউন-মডুলেটর ওষুধ
বেশিরভাগ ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, তাই দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে হোমিওপ্যাথি অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকর।
সোরিয়াসিস রোগের ক্রিম (Psoriasis Creams)
Betamethasone Dipropionate
Calcipotriol
Coal tar-based creams
Salicylic acid
এই সব ক্রিম শুধুমাত্র উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করে, মূল রোগ নিরাময় করে না।
সোরিয়াসিস রোগের ঔষধ (Psoriasis Medicines)
এলোপ্যাথিক ঔষধ: Methotrexate, Cyclosporine, Biologics
হোমিওপ্যাথিক ঔষধ: নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
সোরিয়াসিস এর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা (Homeopathic Treatment for Psoriasis)

হোমিওপ্যাথি সোরিয়াসিস চিকিৎসায় একটি সমন্বিত ও দেহের অন্তর্নিহিত ভারসাম্য পুনঃস্থাপন করে। রোগীর শরীর, মন ও আবেগ বিবেচনায় ওষুধ নির্ধারণ করা হয়।
কার্যকর হোমিওপ্যাথিক ঔষধসমূহ:
Arsenicum Album
ত্বকে জ্বালা, ফাটল ও খোসা পড়া
রাতের বেলা লক্ষণ বাড়ে
মানসিক উৎকণ্ঠা ও শুচিবায়ু প্রবণতা
Graphites
চামড়ায় ঘন খোসা ও আঠালো রস পড়া
স্থুল রোগীদের জন্য উপযোগী
Sulphur
চুলকানি ও ত্বকে পুড়ে যাওয়ার অনুভূতি
খারাপ স্বাস্থ্য অভ্যাসযুক্ত রোগীদের জন্য
Mezereum
চুলকানিযুক্ত ফুসকুড়ি ও খোসা
মাথার স্ক্যাল্পে বেশি কার্যকর
Petroleum
শীতে খারাপ হয় এমন ত্বকের জন্য
ত্বক ফেটে রক্ত পড়ে
সতর্কতা: এই ঔষধগুলো নিজের ইচ্ছায় গ্রহণ করা উচিত নয়। রোগীভেদে ঔষধ ভিন্ন হয়। অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।
FAQ (প্রশ্নোত্তর)
১. সোরিয়াসিস কি সম্পূর্ণ ভালো হয়? সঠিক চিকিৎসা, জীবনযাপন এবং হোমিওপ্যাথিক থেরাপির মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
২. সোরিয়াসিস ছোঁয়াচে রোগ? না, এটি একেবারেই ছোঁয়াচে নয়।
৩. হোমিওপ্যাথিতে কতদিনে আরাম পাওয়া যায়? রোগীর অবস্থা অনুযায়ী সময় ভিন্ন হয়। অনেক রোগী ৩–৬ মাসে ভালো অগ্রগতি দেখেন।
৪. কোন খাবার সোরিয়াসিস বাড়িয়ে দেয়? দুধ, লাল মাংস, ফাস্ট ফুড ও অ্যালকোহল রোগ বাড়াতে পারে।
৫. কীভাবে একজন ভালো হোমিওপ্যাথ খুঁজবো? Google-এ সার্চ করুন: “ভালো হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক চেনার উপায়” বা যোগাযোগ করুন: Global Homoeo Center।