ভেরিকোস ভেইন কী? (What is Varicose Vein?)
ভেরিকোস ভেইন হচ্ছে সেই রোগ যাতে হাত ও পায়ের শিরাগুলি ফুলে গিঁট পাকানোর মত হয়ে ওঠে। ত্বকের ঠিক নীচেই এই ফুলে ওঠা শিরা দেখা যায়। এতে শিরাগুলি গাঢ় বেগুনী বা নীলাভ রঙের হয়ে ওঠে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভেরিকোস ভেইন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে তেমন কোন কষ্টকর উপসর্গ সৃষ্টি হয় না; সমস্যাটি কেবল বাহ্যিক বা দেখতে অস্বাভাবিক লাগাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু কারো কারোর ক্ষেত্রে এর অতিরিক্ত কিছু সমস্যা, যেমন চুলকানি, ব্যথা, অতিরিক্ত ফুলে ওঠা, খিঁচুনি, আক্রান্ত অংশের ত্বকের রঙ পরিবর্তন হয়ে যাওয়া, অস্বস্তি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। সুতরাং, সেইসব ব্যক্তির ক্ষেত্রে আশু উপযুক্ত চিকিৎসার প্রয়োজন দেখা দেয়।
ভেরিকোস ভেইনের কারণ কী? (What are the causes of varicose veins?)
ভেরিকোসিলের ওপর লেখা আর্টিকেলে সেদিন যেমন লিখেছিলাম-
আমরা জানি Heart বা হৃদপিণ্ড থেকে রক্ত artery বা ধমনীর মধ্য দিয়ে শরীরে প্রবাহিত হয় এবং শরীর থেকে সেই রক্ত vein বা শিরার মধ্য দিয়ে হৃদপিন্ডে ফিরে আসে।
এখন vein বা শিরার মধ্যকার রক্তের প্রবাহকে One Way বা একমুখী করে রাখার জন্য শিরার মধ্যে কিছু valve এর ব্যবস্থা থাকে। এই valve গুলো যদি কোন ভাবে ড্যামেজ হয়ে যায় এবং ঠিকঠাক কাজ না করে তখন মধ্যাকর্ষণ বলের কারনে সমস্ত রক্তের চাপ গিয়ে শিরার নিচের অংশের দিকে পড়ে। আর সেই রক্তের চাপেই vein বা শিরাগুলি ফুলে ওঠে এবং প্রসারিত হয় যাকে আমরা ভেরিকোস ভেইন বলে থাকি। সেইম ঘটনা যখন অন্ডকোষের শিরার ক্ষেত্রে ঘটে তখন তাকে আমরা ভেরিকোসেল বলে থাকি।
যাইহোক, এই ঘটনাকেই মূলত ভেরিকোস ভেইন কিংবা ভেরিকোসেলের প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয়।
কিন্তু আমার মতে এটা কেবলমাত্র একটা প্যাথলজিক্যাল চেঞ্জ; রোগের পরবর্তী প্রতিচ্ছবি। তাহলে এই প্যাথলজিক্যাল চেঞ্জ কেন এলো? এর পেছনের কারণ কি? কেন সেই valve গুলো ড্যামেজ হল? কেনইবা তারা ঠিকঠাক কাজ করছে না? সে সমস্ত নিয়ে বিস্তর গবেষণা দরকার রয়েছে।
যাই হোক, কারণ যেটাই হোক না কেন সঠিক সিম্পটম নিরূপণ করে প্রপার হোমিওপ্যাথিক ট্রিটমেন্ট করলে ভেরিকোস ভেইন সম্পূর্ণভাবে আরোগ্য হওয়া সম্ভব। Because we treat the patient, not the disease.
ভেরিকোস ভেইনের লক্ষণ ও উপসর্গ গুলো কী? (What are the Signs and symptoms of varicose veins?)
আমার মনে হয় ভেরিকোস ভেইনের লক্ষণ ও উপসর্গগুলো নিয়ে নতুন করে খুব বেশি বলবার আর প্রয়োজন নেই। কারণ এইতোপূর্বেই বলা হয়েছে ভেরিকোস ভেইন এ হাত এবং পায়ের শিরাগুলি গিট গিট হয়ে ফুলে ওঠে। আর উপসর্গ হিসেবে ব্যথা, চুলকানি, রক্ত জমা, আক্রান্ত স্থানের রং এর পরিবর্তন, খিঁচুনি প্রভৃতি থাকতে পারে।
তবে এসব উপসর্গ খুব বেশি রোগীদের মধ্যে দেখাও যায় না, আর রোগীরা সাধারণত এসব উপসর্গের কারণেও আমাদের কাছে আসে না। রোগীরা সাধারণত আমাদের কাছে আসে ভেরিকোস ভেইন এর জন্য তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেখতে খারাপ দেখায় এই কারণে।
ভেরিকোস ভেইনের সম্ভাবনা কাদের বেশী? (Who is more likely to have varicose veins?)
১। পরিবারে কারো ভেরিকোস ভেইন থাকা অর্থাৎ জেনেটিক কারণে ভেরিকোস ভেইন এর সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
২। যাদের স্থুলতা রয়েছে।
৩। যাদের দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার অভ্যাস রয়েছে।
৪। যাদের আঘত বা ইনজুরির ইতিহাস রয়েছে।
ভেরিকোস ভেইনের প্রচলিত চিকিৎসা (Conventional treatment of varicose veins)
প্রচলিত পদ্ধতিতে ভেরিকোস ভেইনের রোগীদেরকে ফোম স্ক্লেরোথেরাপি, এন্ডোভেনাস লেজার থেরাপি, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাপ্লিকেশন, সার্জারি বা অপারেশন, এসবের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। তবে এগুলো বেশ ব্যয়বহুল এবং সর্বোপরি এতে সাধারণত পার্মানেন্ট এন্ড প্রপার সলুশন হয় না।
ভেরিকোস ভেইনের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা (Homoeopathic treatment of varicose veins)
ভেরিকোস ভেইন রোগীদের জন্য বহু প্রসিদ্ধ ঔষধ রয়েছে হোমিওপ্যাথিতে। তবে আসল কথা হচ্ছে হোমিওপ্যাথি কোন ঔষধের স্বতন্ত্র প্রসিদ্ধতায় বিশ্বাস করে না। যেকোনো রোগের যেকোনো রোগীর ক্ষেত্রেই হোমিওপ্যাথির রুল এন্ড রেগুলেশন একটাই; সেটা হচ্ছে প্রপার কেস টেকিং>> এভালুয়েশন অব সিম্পটম>> এন্ড সিলেক্ট দ্যা রাইট রেমিডি।
আর এই নিয়মেই মিলবে ভেরিকোস ভেইন এর রোগীদের সত্যিকারের সমাধান। তবে এখানে উল্লেখ্য যে সব কিছুরই একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অনেক রোগী এমন সিভিআর কন্ডিশনে চলে যেতে পারে যেখানে হয়ত সার্জারি একান্তই আবশ্যক হয়ে পড়বে। কাজেই এই সমস্যা ধরা পড়লে সময় নষ্ট না করে প্রত্যেক রোগীরই উচিত একজন নির্ভরযোগ্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা নেওয়া।