অলিগোস্পার্মিয়া কী? (What is oligospermia?)
✍️ অলিগোস্পার্মিয়া (Oligospermia): একজন মহিলাকে গর্ভবতী করার জন্য, একজন পুরুষের বীর্যতে পর্যাপ্ত পরিমাণে শুক্রাণুর প্রয়োজন হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউ. এইচ. ও)-এর মতে, যদি প্রতি মিলিলিটার বীর্যতে শুক্রাণুর সংখ্যা ১৫ মিলিয়ন এর কম হয়, তবে এই অবস্থাকে অলিগোস্পার্মিয়া বলা হয়। এতে সেই পুরুষের পক্ষে একজন মহিলাকে গর্ভবতী করার সক্ষমতা হ্রাস পায়।
অলিগোস্পার্মিয়ার শ্রেণীবিভাগ (Classification of Oligospermia):
✍️ অলিগোস্পার্মিয়াকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা যেতে পারে, যথা-
- Mild oligospermia (হালকা অলিগোস্পার্মিয়া): যখন শুক্রাণুর সংখ্যা প্রতি এমএল এ ১০ থেকে ১৫ মিলিয়ন মধ্যে থাকে।
- Moderate oligospermia (মাঝারি অলিগোস্পার্মিয়া): যখন শুক্রাণুর সংখ্যা প্রতি এমএল এ ৫ থেকে ১০ মিলিয়ন এর মধ্যে থাকে।
- Severe oligospermia (গুরুতর অলিগোস্পার্মিয়া): যখন শুক্রাণুর সংখ্যা প্রতি এমএল এ ০ থেকে ৫ মিলিয়ন এর মধ্যে থাকে।
অলিগোস্পার্মিয়ার কারণ (Causes of Oligospermia):
Hormonal imbalances/ হরমোনের ভারসাম্যহীনতাঃ শুক্রাণু উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোনগুলি হাইপোথ্যালামাস এবং পিটুইটারি গ্রন্থি দ্বারা উত্পাদিত হয়। এই হরমোনে কোনও পরিবর্তন ঘটলে শুক্রাণুর উৎপাদন ব্যাহত হয়।
Ejaculatory problems/ বীর্যপাতজনিত সমস্যাঃ যখন বীর্য লিঙ্গ থেকে বেরিয়ে আসার পরিবর্তে মূত্রাশয়ে ফিরে যায়, তখন এটি রেট্রোগ্রেড বীর্যপাত হিসাবে পরিচিত। এই অবস্থা শুক্রাণুর সংখ্যা কমাতে পারে এবং পুরুষদের মধ্যে বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে।
Undescended testicles/ অবনত অণ্ডকোষঃ এই অবস্থা নিয়ে জন্মগ্রহণকারী পুরুষদের উর্বর হওয়ার সম্ভাবনা কম। যদি ভ্রূণের বিকাশের সময়, অণ্ডকোষগুলি পেট থেকে সেই থলিতে নেমে না যায় যা স্ক্রোটাম গঠন করে, তবে সেই ব্যক্তির উর্বরতা ব্যাহত হয়।
Anti-sperm antibodies/ অ্যান্টি-স্পার্ম অ্যান্টিবডিঃ অ্যান্টি-স্পার্ম অ্যান্টিবডি নামে পরিচিত কিছু ইমিউন সিস্টেম কোষ শুক্রাণু কোষগুলিকে ভুল করে ক্ষতিকারক আক্রমণকারী হিসাবে চিহ্নিত করে হত্যা করে যার ফলে শুক্রাণুর সংখ্যা কম হয়।
Chromosomal abnormalities/ ক্রোমোসোমাল অস্বাভাবিকতাঃ ক্লাইনফেল্টার্স সিনড্রোম, ক্যালম্যানস সিনড্রোম এবং কার্টাজেনার সিনড্রোমের মতো কিছু জিনগত ব্যাধি পুরুষ প্রজনন অঙ্গগুলিতে অস্বাভাবিক বিকাশ ঘটাতে পারে।
Obstructions/ বাধাঃ অলিগোস্পার্মিয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল বাধা। শুক্রাণু বহনকারী টিউবগুলি, যদি সিস্টিক ফাইব্রোসিসের মতো কিছু অস্বাভাবিক বিকাশ বা পূর্ববর্তী অস্ত্রোপচার এবং সংক্রমণের কারণে কোনও আঘাতের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়, তবে বীর্যের প্রবাহ কম হতে পারে।
Trauma or injury/ ট্রমা বা আঘাতঃ কিছু অস্ত্রোপচার যেমন ভ্যাসেক্টমি, হার্নিয়া মেরামতের অস্ত্রোপচার, স্ক্রোটাল সার্জারি, প্রস্টেট সার্জারি ইত্যাদি। আপনার বীর্যপাতের শুক্রাণুর সংখ্যা কমাতে পারে।
Certain medications/ কিছু ওষুধঃ কিছু ওষুধ যেমন অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টিবায়োটিক, আলসার ওষুধ, কেমোথেরাপি ওষুধ, টেস্টোস্টেরন প্রতিস্থাপন থেরাপি ইত্যাদি একজনের শরীরে শুক্রাণু উৎপাদন ব্যাহত করতে পারে।
Environmental factors/ পরিবেশগত কারণঃ রাসায়নিক বিকিরণ এবং ভারী ধাতুর সংস্পর্শে শুক্রাণুর উৎপাদন হ্রাস করতে পারে।
অলিগোস্পার্মিয়ার লক্ষণঃ (Symptoms of Oligospermia)
কিছু পুরুষের ক্ষেত্রে অলিগোস্পার্মিয়ার কোনও সুস্পষ্ট লক্ষণ দেখা যায় না। শুধুমাত্র যখন কারো সন্তান ধারণ করতে অসুবিধা হয় তখন চিকিৎসা নিতে গেলে চিকিৎসকের ইনভেস্টিগেশন এর মাধ্যমে এই অবস্থা নির্ণীত হয়। কিন্তু যদি কোনও পুরুষের ক্রোমোসোমাল অস্বাভাবিকতা, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বা কোনও বাধার মতো অন্যান্য অন্তর্নিহিত সমস্যার কারণে অলিগোস্পার্মিয়া হয়, তবে নির্দিষ্ট কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
আসুন সেক্ষেত্রে অলিগোস্পার্মিয়ার লক্ষণগুলি কী হতে পারে একবার দেখে নেওয়া যাকঃ
অণ্ডকোষে ফোলাভাব, ব্যথা বা গাঁট।
যৌন ক্রিয়াকলাপের সমস্যা যেমন যৌন মিলনের সময় উত্থান বজায় রাখতে অক্ষমতা বা ইরেক্টাইল ডিসফাংশন।
মুখ এবং শরীরের চুলের কম বৃদ্ধি ক্রোমোসোমাল অস্বাভাবিকতা এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতার অন্যান্য লক্ষণ।
ঘন স্রাব।
অণ্ডকোষের শিরাগুলি প্রসারিত এবং ফুলে যায়।
যদি ভাইরাস সংক্রমণের কারণে এই সমস্যা হয়, তাহলে প্রস্রাবের সময় কেউ কিছু জ্বালা অনুভব করতে পারে।

অলিগোস্পার্মিয়া রোগ নির্ণয়ঃ (Diagnosis of Oligospermia)
নিচের পরীক্ষা নিরীক্ষা গুলোর মাধ্যমে অলিগোস্পারমিয়া নির্ণয় করা যেতে পারে।
Semen analysis
Scrotal ultrasound
Hormone testing
Post-ejaculation urine analysis
Genetic tests
Testicular biopsy
Anti-sperm antibody tests
Specialized sperm function tests
Transrectal ultrasound
অলিগোস্পার্মিয়ার চিকিৎসাঃ (Treatment of Oligospermia)
প্রপার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মাধ্যমে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অলিগোস্পার্মিয়া খুব সহজেই ঠিক হয়ে যেতে পারে। এমনকি সিস্ট, টিউমার, ভেরিকেসিল এই জাতীয় সমস্যাগত অলিগোস্পার্মিয়া সাধারণত হোমিওপ্যাথিক ওষুধের মাধ্যমেই ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু এছাড়া কোনো গুরুতর অবস্ট্রাকশান বা শরীরের অবকাঠামগত পরিবর্তন হয়ে গেলে ক্ষেত্র বিশেষে সার্জারির দরকার হতে পারে।